শিল্প-কারখানায় হামলা-লুটপাট : উদ্যোক্তারা উৎকণ্ঠায়

নাদিম মাহমুদ

রিপোর্টার

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২৪ , ১১:১১ পূর্বাহ্ণ আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২৪ , ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

বিক্ষোভ, হামলা, লুটপাটের শিকার হচ্ছে শিল্প-কারখানা। রপ্তানিমুখী শিল্পের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতের সাধারণ কারখানাও হামলা-লুটপাট থেকে বাদ যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই রপ্তানিমুখীসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা আক্রান্ত হচ্ছে। নানান ছুতায় শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছেন বলে মালিকরা মনে করেন।

পোশাক খাতের বাইরে সম্প্রতি গাজী টায়ার কারখানায় লুটপাটে যোগ দিয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। এ রকম ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি ক্রেতারা আতঙ্কিত হয়ে তাঁদের অর্ডার বাতিলের আভাস দিচ্ছেন বলেও জানান উদ্যোক্তারা। পরস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় চরম উদ্বেগে আছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক কারখানায় বিক্ষোভ, ভাঙচুর করা হয়েছে।

উদ্যোক্তারা জানান, ৯৯.৩০ শতাংশ কারখানায় বেতন হওয়ার পরও তাঁদের কারখানা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ভুল বার্তা যাচ্ছে। তথ্য-উপাত্ত বলছে, দেশের রপ্তানি আয়ের বেশির ভাগই আসে পোশাক রপ্তানি থেকে। গত কিছুদিন থেকে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কম থাকলেও ডলার সংকটের সময় এ খাতই বৈদেশিক মুদ্রা মজুদে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যেভাবে নির্বিচারে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা, লুটপাট শুরু হয়, তার রেশ এখনো রয়ে গেছে।

তবে এখন বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিল্প-কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কয়েক মাস ধরেই শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অর্ডার আগের চেয়ে কমে গেছে। এর মধ্যে হামলা, লুটপাটে অনেক কারখানা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে পোশাক মালিকরা সরকারের কাছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা চেয়েছেন।

পুরো পরিস্থিতি নিয়েও তাঁরা তাঁদের উদ্বেগের বিষয়টি সরকারের শীর্ষ মহলেও জানিয়েছেন। তবে পরিস্থিতি পুরো স্বাভাবিক হয়নি। পরিস্থিতি শিল্পের জন্য খুবই উদ্বেগের জানিয়ে বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট খন্দকার রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগে কিছু কিছু কারখানায় একেবারে অপ্রয়োজনে হাজিরা ভাতা বাড়ানোর মতো দাবিতে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা।

শিল্পটা অস্থির করা যায় কি না এটা একটা কারণ হতে পারে। এটা আমাদের বায়ারদের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছে। তবে আমরা নিজেরা কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা গড়ে তুলছি। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে সহায়তা নিচ্ছি। তারা ভালো সাপোর্ট দিচ্ছে। আশা করি পরস্থিতির উন্নতি হবে।’

পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক কারখানা বেতন দেওয়ার পরও হামলা ও লুটপাটের শিকার হচ্ছে। দাবি আদায়ের যে হিড়িক পড়েছে, এটাকে কাজে লাগিয়ে একটি সুযোগসন্ধানী গ্রুপ নানান ছুতায় এ কাজে যুক্ত হয়ে শিল্পকে অস্থির করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিজিএমইএর ২৯ আগস্টের হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, বেতন-ভাতা দেওয়ার পরও অন্তত ১১টি কারখানা হামলা ও লুটপাটের শিকার হয়েছে।

মিরপুরের রিও ফ্যাশন নামের কারখানায় গত ২২ আগস্ট জুলাই মাসের বেতন দেওয়া হয়। অথচ শ্রমিকদের নাম করে একটি চক্র রাস্তায় নামে। গাজীপুরের বাইপাইলের টিএনজেড অ্যাপারেলস এবং বেসিক নিট লিমিটেডের অর্ধেক বেতন দেওয়া হয় গত ২২ আগস্ট। এখানে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাঁরাও রাস্তা অবরোধ করেন।

সাভারের অ্যাপারেল টু ডে লিমিটেড নামের কারখানায় বেতন দেওয়ার পরও শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে কারখানায় বসে থাকেন। সাভারের বসুন্ধরা গার্মেন্টসও বেতন দিয়েছে, তার পরও কারখানা বন্ধ করে দেন শ্রমকিরা। গাজীপুরের টিআরজেড গার্মেন্টস বেতন দিয়েছে ২৫ আগস্ট। সেখানকার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করার কারণে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আশুলিয়ার ডং লিয়ান ফ্যাশন মারামারির কারণে গত ২৬ আগস্ট থেকে বন্ধ। পরিস্থিতি খারাপ বিবেচনা করে পাশের স্কাইলাইন গ্রুপের তিনটি কারখানা বন্ধ করে রাখা হয়। এসব কারখানার শ্রমিকরা গেট ভাঙচুর ও রাস্তা অবরোধ করেন। আশুলিয়ার পার্ল গার্মেন্টসের শ্রমিকরা টিফিন বিল, নাইট বিল ও হাজিরা বোনাসের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেন।

বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে বেতন বাড়ানো হয়েছে। এখন এ দাবি থাকার কথা নয়। একসময় শ্রমিকরা আন্দোলন করতেন। এখন তা করছে সুযোগসন্ধানী একটি গ্রুপ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির এ বার্তা বায়াররাও পেয়েছেন।

তাই স্বাভাবিকভাবে তাঁদের মধ্যে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা কাজ করছে। কারণ অনেক ভালো কারখানায়ও যে ধরনের লুটপাট হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে; এসব দেখার পরে বায়াররা স্বাভাবিকভাবেই আস্থা রাখতে পারবেন না।

এদিকে শুধু পোশাক কারখানাই নয়; অন্য অনেক খাতের শিল্প-কারখানা আক্রান্ত হচ্ছে। কালের কণ্ঠ’র গাজীপুরের কালিয়াকৈর প্রতিনিধি জানান, স্থানীয় জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস নামের একটি ওষুধ কারখানায় বিক্ষোভ প্রদর্শন ও কর্মবিরতি পালন করেছেন কর্মীরা। এ সময় তাঁরা ১৬ দফা দাবি জানান। এ সময় তাঁরা সফিপুর-বড়ইবাড়ি আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নেন। এতে সড়কে কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।

কারখানা মালিকরা জানান, এভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত হামলা, লুটপাট বন্ধ না হলে ইমেজ সংকট আরো বাড়বে। এতে অর্ডার আরো কমে যেতে পারে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে। অথচ এটিই এখন সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
top