সংস্কার দ্বন্দ্বে জনপ্রশাসন ক্যাডার ও ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা 

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৫ , ৫:৪১ অপরাহ্ণ আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২৫ , ৫:৪৪ অপরাহ্ণ

সম্প্রতিকালে যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলছে তা হচ্ছে, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন নিয়ে বিভিন্ন ক্যাডারের দ্বন্দ্ব । প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা চাচ্ছে উপসচিব পদে শতভাগ কোটা। অন্যদিকে বাকি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের করা দাবি পরীক্ষার মাধ্যমে উপসচিব নিয়োগ।

মূলত প্রশাসন ক্যাডারের বিরুদ্ধে বাকি ২৫ ক্যাডারের এ আন্দোলনে পক্ষে বিপক্ষে মিছিল, মিটিং, সেমিনার, কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। যা সরকারি কর্মচারীদের কোড অফ কন্টাক্ট বহির্ভূত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের ৩অক্টোবর সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ৮ সদস্যের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠিত হয়। গত ১৭ ডিসেম্বর সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিবের প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশাসন ক্যাডারের লাইন পদ উপসচিব পদে অন্যান্য ক্যাডারের জন্য ৫০% কোটার সুপারিশ করার কথা ব্যক্ত করেন। এরপর  সংক্ষুব্ধ প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে  সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব মো: মোকলেস উর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেদের ভাবনার বিষয়টি অবহিত করেন। প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাগণ গত ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে ঢাকার বিয়াম মিলনায়তনে বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের ব্যানারে প্রতিবাদ সভা করেন। অন্যদিকে প্রশাসন বাদে বিসিএসের বাকি ২৫ ক্যাডারের জোট আন্ত্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ ৫ অক্টোবর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যদের প্রত্যাখ্যান করে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে বিসিএস তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, বৈষম্যপূর্ণ এ কমিশন কোনভাবেই বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবেনা; বরং বিদ্যমান সিভিল প্রশাসন আরো গণবিরোধী  হবে। শিক্ষা ক্যাডারের মফিজুর রহমান বলেন, আমরা সরকারের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটি পূর্ণ গঠনের দাবি তুলে ধরেছি। সরকারকে বুঝতে হবে আমরা দেশের মোট ৯০ থেকে ৯২ ভাগ ক্যাডার কর্মকর্তার প্রতিনিধিত্ব করি। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, জনগণের করের টাকায় বেতনভুক্ত ব্যক্তি কোন ভাবেই জনগণের প্রশাসক হতে পারে না। জনপ্রশাসন শব্দটি যথাযথ নয়। জনপ্রশাসন শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মানুষকে শাসনও নির্যাতনের বীজ। আধুনিক বাংলাদেশের সেবা ব্যবস্থাপনা থেকে জনপ্রশাসন শব্দটি বাতিলের দাবি জানানো হয়।

অন্যদিকে জনপ্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকার কর্তৃক বিধিবদ্ধভাবে গঠিত সংস্কার কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, মীমাংসিত সরকারি পরিভাষাকে প্রকাশ্যে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। যা সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি মালা ১৯৭৯ এর লঙ্ঘন।

বিসিএস প্রশাসন কল্যাণ সমিতির সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, ১৮৫৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত উপসচিব ছিল শতভাগ প্রশাসন ক্যাডার হতে পদোন্নতিপ্রাপ্ত। ১৯৭৯ সালে সিনিয়র সার্ভিস  প্রতিষ্ঠিতা পুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৯ সালে কমিশনের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে পুল প্রথা ব্যর্থ হওয়ায় তা বাতিল করা হয়। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো প্রশাসন ক্যাডারের নির্ধারিত পদ উপসচিব পদে পদয়নে ২৫% অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ বিধান প্রচলিত থাকলেও উপসচিব পদে ৭৫ ভাগ প্রশাসন ক্যাডারের কোটা বলে অপপ্রচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন উপসচিব পদে আমরা শতভাগ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা পুনর্বহাল চাই। তিনি বলেন, ১৯৯৮ ও ২০০২ সালের পদোন্নতি নীতিমালায় প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ পার্সেন্ট কে অন্যান্য ক্যাডারের কয়েকজন উপসচিব প্রত্যাশী কর্মকর্তা আদালতে আপিল করেন। যার সিভিল আপিল নং ২৯৪-৯৮/২০০৩। মামলার বিস্তারিত শুনানিতে ৭৫ ভাগ শুধু বই দুই নয় বরং যৌক্তিক, বাস্তবসম্মত এবং সংবিধানসম্মত বলে ঘোষণা দেয়। বিষয়টি আদালতে মীমাংসিত।

অন্যদিকে গত ১৬ নভেম্বর ২০২৪ রাজশাহীতে ২৫ ক্যাডারের জোট আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব  করেন গণপূর্ত ক্যাডারের অ্যাডিশনাল চিপ ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুল গফফার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পোস্টাল ক্যাডারের কর্মকর্তা পোস্টমাস্টার জেনারেল কাজী আসাদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে পেশাবৃত্তিক মন্ত্রণালয় গঠন অর্থাৎ ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার এবং পক্ষপাতপুষ্ট প্রশাসন সংস্কার কমিশন পূর্ণ গঠন করা সহ বেশ কিছু দাবিও সুপারিশ করে আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।

 

সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে প্রশাসন ক্যাডার ও ২৫ ক্যাডারের আন্দোলন সম্পর্কে সরকারি কর্মচারীদের সরকারি আচরণবিধি লংঘন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রশাসন ক্যাডারের নাজমুস সাদাত এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের প্রতিবাদ সভাটি আয়োজনের বহু আগে থেকেই বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মচারীগণ আচরণবিধির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছেন। তারা বিভাগীয় সম্মেলন করেছেন। অফিস চলাকালীন সময়ে কলমবিরতি পালন করেছেন। একাধিকবার মিছিল, মিটিং ও সমাবেশ করেছেন। প্রশাসনের প্রতিবাদ সভা আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়ে থাকলে এ আচরণবিধি সংস্কার কমিশন গঠনের শুরু থেকেই আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ লঙ্ঘন করে আসছেন ।একই যাত্রায় ভিন্ন ফল কাব্য নয়। আচরণবিধির সকল সরকারি কর্মচারীর প্রতি সমভাবে প্রযোজ্য হওয়া উচিত এবং সরকারি কর্মচারী হিসেবে সরকারের নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতাকে প্রথমে থামানো জরুরী। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ সংস্কার কমিশন গঠনের পর থেকে নীরবতা পালন করে আসছিলেন। অন্যান্য ক্যাডারের সহকর্মীদের আচরণ বিধির প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন ও উস্কানি মূলক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নীরবতা ভঙ্গ করেন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসাটা অপ্রত্যাশিত না হলেও অভিযোগে সকলি সমভাবে অভিযুক্ত হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখা রাষ্ট্রের স্বার্থে অত্যন্ত জরুরি অন্যথায় বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে এ অগ্রযাতায় বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
top