বিএনপি নেতার জমি দখলের অভিযোগ

কেরানীগঞ্জে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে শীর্ষ ভূমিদস্যু বিপু ও শাহিন বাহিনীর সদস্যরা 

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৪ , ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ আপডেট: অক্টোবর ১৯, ২০২৪ , ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ

সন্ত্রাসের জনপদ ঢাকার কেরানীগঞ্জে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে শীর্ষ ভূমিদস্যু সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দিপু ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন বাহিনীর সদস্যরা। নতুন করে জমি দখলের পর সাইনবোর্ড লাগিয়েছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন জমির উপর। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাও এ ব্যাপারে অনেকটা দায়ী বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসীর অভিযোগ ৫ ই আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে পতন হয়ে যায় কেরানীগঞ্জের শীর্ষ  ভূমিদস্যু নসরুল হামিদ বিপু ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদের। দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তাদের পতন  হয়েছে। গত ১৫ বছরে কেরানীগঞ্জ উপজেলার দুটি থানা এলাকায় নসরুল হামিদ বিপুর রিয়েল এস্টেট কোম্পানি প্রিয় প্রাঙ্গণ ও শাহিন আহমেদের কিউট হাউজিং নামে শত শত বিঘা জমি দখলে নেয়। দখলের মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন, সরকারি খাস জমি, পুকুর-জলাশয় ও হিন্দু সম্পত্তি রয়েছে। এসব দখলের পিছনে রয়েছে তার বিশাল বাহিনী। এই বাহিনী সরকারি জমি ছাড়াও জোরপূর্বক সাধারণ মানুষের জমি দখল করে কিউট হাউজিং অথবা প্রিয় প্রাঙ্গণ রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিত। কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজেন্দ্রপুর, শুভাঢ্যা, কোনাখোলা, জিনজিরা, রুহিতপুর, আটিবাজার সাব রেজিস্টার অফিসে তার বাহিনীর সদস্যরা বসে থাকতেন। কেউ জমি রেজিস্ট্রি করতে আসলে তাদেরকে বাধা দিতেন। পরে উক্ত জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দখলে নিতেন। দখলের পর সামান্য টাকা দিয়ে জমির মালিকদের বিদায় করা হতো। এরকম কেরানীগঞ্জ উপজেলার দুটি থানার ১২ ইউনিয়নে বিপুর প্রিয় প্রাঙ্গণ ও শাহিন আহমেদের কিউট হাউজিংয়ের শত শত একর জমি দখলে রয়েছে। শাহিন আহমেদ ও বিপুর নির্যাতনের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন তারা, যাদের জমি এই দুই ভূমিদস্যুর প্রজেক্টের পাশে। প্রজেক্টের পাশে থাকা জমির মালিক বা হাউজিং কোম্পানি গুলো গত ১৫ বছরে তাদের জমি বিক্রি, নামজারি করা নিষিদ্ধ ছিল।

৫  আগস্ট শীর্ষ এই দুই ভূমিদস্যু এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যায় তার বাহিনীর সদস্যরাও। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, জবরদখল, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, অবৈধ চাঁদাবাজি সহ বিস্ফোরক আইনে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ৫টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের একজন শীর্ষ নেতা ও ঢাকা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে বিপুল অর্থ উৎকোচের বিনিময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও শাহিন বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

গত বৃহস্পতিবার এই বাহিনীর সদস্য আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী আজিজুল, মোহাম্মদ জিন্নাহ, মোহাম্মদ আল-আমিন ও মরিয়ম মেম্বারের ছেলে আরিফুর রহমান ১০/১৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলার খেজুর বাগ বন্দে ইকুরিয়া মৌজার ১৩ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। দখলের পর সন্ত্রাসীরা তাদের নামে জমির মালিকানা দাবি করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। এ সময় উক্ত জমির মালিক জিএম সারোয়ার ও সিদ্দিকের কর্মচারীরা জমির চারপাশে বাউন্ডারি তৈরির কাজ করছিল। এর আগেও উক্ত জমি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকলীন সময়ে দখল হয়েছিল। জমির দলিল জাল-জালিয়াতি করে তখন দখলে নেয়। দখলের আগে সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জমির মালিক জিএম সারোয়ারকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে জমিটি ছেড়ে দিতে বলেন। তখন জিএম সারোয়ার দখলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় গত ১৩মে২০২৪ তারিখে মামলা করেন। যার মামলা নং২৬। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম  ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে জমির মালিক জিএম সারোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি এবং তার ব্যবসায়িক পার্টনার সিদ্দিকুর রহমান যৌথভাবে ১৯৯৪ সালে কেরানীগঞ্জ উপজেলার ইকুরিয়া মৌজায় ১৩.৬৭ শতাংশ জমি ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে ভোগ দখল করে আসছি। জমির উপরে আমার ছনের ঘর নামক একটি বিশ্ছিরামাগার ছিল। এটি সুনামের সাথে পরিচালনা করেছিলাম। অনেক বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা, সমাজসেবক আমার ছনের ঘরে আসতেন। বিএনপি’র শাসনামলে বর্তমান বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও একবার এসেছিলেন। আমি বিএনপি করার অপরাধে সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর নির্দেশে আমার জমিটি গত১মে২০২৪ সন্ধ্যায় দখল করে নেয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এ ব্যাপারে থানায় মামলা রয়েছে। তিনি বলেন দখলের আগে আমাকে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু তার বাসায় ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এবং জমিটি ছেড়ে দিতে বলেন। আমি জমিটি  ছাড়তে না চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা লাট মিয়াকে দিয়ে ৫০ বছর পুরনো রেকর্ডে ভুল হয়েছে দাবি করে ভুয়া জাল জালিয়াতির দলিল করে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জমিটি দখল করে আমার জমিতে থাকা মালামাল লুট করে নিয়েছিল। এ ব্যাপারে থালায় মামলা করা হলে পুলিশ কিছু মালামাল উদ্ধর করতে সক্ষম হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার একজন রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় মরিয়ম মেম্বারের ছেলে আরিফের মাধ্যমে উক্ত সন্ত্রাসীরা আবারো আমার জমিটি দখল করে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে।

এছাড়াও নসরুল হামিদ বিপু ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা জসিম মাহমুদ, মধু সিটির হাবিব, তারানগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ফারুক, কোন্ডা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রাসেল তাদের বাহিনী নিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের নেতার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেএলাকায় নতুন করে দখলের রাম রাজত্ব কায়েম করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
top