২০১৭ সালের এই দিনে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান
আজ ঢালিউড কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাকের চলে যাওয়ার দিন। ২০১৭ সালের এই দিনে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। দেখতে দেখতে ছয় বছর পেরিয়ে আজ সাত বছরে।
নায়করাজ একজন কিংবদন্তি, যাকে মহানায়ক হিসেবে আমরা বাংলা চলচ্চিত্রে অভিহিত করে থাকি। তার জীবন ছিল সংগ্রামে ভরা, কিন্তু সেই লড়াই-সংগ্রাম অতিক্রম করে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে আজ তিনি ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির নায়করাজ রাজ্জাক। তাই তার তুলনা শুধুই তিনি। আর কাউকেই এ অভিনেতার সঙ্গে মেলানো সম্ভব নয়।
নায়করাজ রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের কলকাতা শহরের নাকতলায় জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে ওঠাও সেখানেই। স্বাধীনতার আগে ১৯৬৪ সালে ভারত ছেড়ে স্ত্রী লক্ষ্মী ও সন্তান বাপ্পারাজকে নিয়ে অনিশ্চিত গন্তব্য ঢাকায় চলে আসেন। পরবর্তী সময়ে কষ্ট ও মেধার অসামান্য সমন্বয়ে নিজেকে চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেন নায়করাজ হিসেবে।
১৯৬৬ সালে বেহুলা চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে ঢাকাই ছবিতে দর্শকনন্দিত হন কিংবদন্তি এ অভিনেতা। তিনি একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। সত্তরের দশকেই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের সেরা নায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নায়করাজ সেই আলোচিত বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, এতটুকু আশা, অশ্রু দিয়ে লেখা, ওরা ১১ জন, অবুঝ মনে অভিনয় করে নিজেকে সেরাদের সেরার কাতারে নিয়ে যান।
তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন, এই বিনোদন জগতের সঙ্গেই ছিলেন। আমৃত্যু এই শিল্পের সঙ্গেই থাকতে চাওয়ার কথা জানিয়ে একসময় নায়করাজ বলেছিলেন— আমি রাজ্জাক হয়তো অন্য কোনো চাকরি করতাম অথবা ঘুরে বেড়াতাম। কিন্তু ছোটবেলায় অভিনয়ের প্রচেষ্টাকে আমি হারাতে দিইনি। আমি নাটক থেকে চলচ্চিত্রে এসেছি। সবাই আমাকে চিনেছে। পেয়েছি সাফল্যও। বাংলার মানুষ আমাকে একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবেই দেখেন ও আমাকে ভালোবাসেন। আজকে আমার যা কিছু হয়েছে, সবই এই চলচ্চিত্রশিল্পের কল্যাণে।’
আজকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নায়করাজের পরিবারের উদ্যোগেও থাকছে নানা আয়োজন। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে নায়করাজের ছোট ছেলে সম্রাট বলেন, ‘বনানী কবরস্থানে আব্বার কবর জিয়ারত তো আছে। বাসায় আমরা পরিবারের সবাই আব্বার স্মরণে কোরআনখানি করব। থাকবে মিলাদ মাহফিলও। এ ছাড়া বাসায় ও বাইরে গরিব মানুষকে খাওয়ানোর আয়োজনও থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘অন্য সবার কাছে বাবা ছিলেন চলচ্চিত্রের হিরো। কিন্তু তিনি আমাদের কাছে ছিলেন বাস্তবজীবনের নায়ক। ব্যক্তিজীবনে কত সংগ্রাম করে বাবা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সে গল্প বলে শেষ করা যাবে না। সেসব গল্প তিনি আমাদের বলতেন। কোনো জিনিসের প্রতি কারও যদি একাগ্রতা থাকে, তাহলে মানুষ তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে— এটি বাবা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।’
গুণী এই অভিনেতার স্মরণে চ্যানেল আই দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। নায়করাজ রাজ্জাককে নিবেদন করে বুধবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে প্রচারিত হবে নিয়মিত আয়োজন ‘গান দিয়ে শুরু’। এতে রাজ্জাক অভিনীত বিভিন্ন চলচ্চিত্রের গান শোনাবেন শিল্পী খুরশীদ আলম। সঙ্গে থাকবে সেরাকণ্ঠের বিকসাম ও অনন্যা আচার্য্য।
এরপর দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে প্রচারিত হবে ‘তারকাকথন’-এর বিশেষ পর্ব। এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে থাকবেন রাজ্জাকপুত্র চিত্রনায়ক ও নির্মাতা সম্রাট। আয়োজনের এখানেই শেষ নয়, এদিন বেলা ৩টা ৫ মিনিটে দেখানো হবে শাইখ সিরাজ নির্মিত রাজ্জাকের জীবনীনির্ভর প্রামাণ্যচিত্র রাজাধিরাজ রাজ্জাক। রাত ১০টা ২০ মিনিটে থাকছে আবদুর রহমানের উপস্থাপনায় রাজ্জাককে ঘিরে ‘সাময়িকী’ অনুষ্ঠানের বিশেষ পর্ব।