একটি মারামারি মামলার আসামি শরিফার পক্ষে একশ টাকা ভাড়ায় হাজিরা দিতে এসে আদালতের কাছে ধরা পড়েন শারমিন নামে এক নারী। আদালত প্রতারণার অভিযোগ এনে শারমিন ও সেতারা নামে দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে তাদের দুইজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
রোববার দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হানীমুন তানজিনের আদালতে মামলার হাজিরা দিতে এমন ভয়াবহ প্রতারণার আশ্রয় নেন তারা। এ ঘটনায় আদালতপাড়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী বাপ্পি শর্মা তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে ভুয়া হাজিরার বিষয়টি আদালতের কাছে ধরা পড়ে।
শারমিন উখিয়া হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পাগলির বিল এলাকার বাসিন্দা আলী আহমদের স্ত্রী।
সূত্রে জানা যায়, ২৪ এপ্রিল কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার পশ্চিম ভাদিতলা গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিকের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালায় স্থানীয় জসিম উদ্দিন, রোকন উদ্দিন, শরিফা, সেতারা ইয়াছমিন ও আবেদাসহ অন্যরা। তাদের হামলায় আহত হন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাসহ ৩ জন। এ ঘটনায় জসিমকে প্রধান আসামি করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলি আদালত ঈদগাঁও একটি মামলা দায়ের করেন আবু বক্কর ছিদ্দিকর স্ত্রী কুলসুমা বাহার।
রোববার মামলার ধার্য দিন ছিল। যথারীতি আদালত চলাকালে আসামিরা হাজিরা দিতে কাঠগড়ায় দাঁড়ান। এ সময় বাদী কুলসুমা আদালতে অভিযোগ করেন কাঠগড়ায় দাঁড়ানো শরিফা নামে নারীটি প্রকৃত আসামি নন। শরিফা আদালত প্রাঙ্গণেই আসেনি। আসামিপক্ষ এ নারীকে শরিফা সাজিয়ে হাজিরা দিতে ভাড়া করেছে। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাই করে প্রতারণার সত্যতা পেয়ে শারমিন ও সেতারা নামে দুজনকে আটকের নির্দেশ দেন। পরে আদালত বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলি আদালত ঈদগাঁও আদালতের বেঞ্চ সহকারী মকছুদ আহমেদ জানান, এ ঘটনায় আদেশনামা মূলে কক্সবাজার সদর আদালতে মামলা করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ শফি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় আদালত বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় সেতারা ও শারমিনকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী বাপ্পি শর্মা জানান, আদালতে ভুয়া হাজিরা দেওয়াটা অপরাধ এবং পেশা পরিপন্থি কাজ। আসামি সেতারাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে এসব প্রতারণা দিন দিন বেড়ে যাবে। পাশাপাশি আইনজীবীদের আরও সচেতন হওয়া জরুরি। এ ধরনের ঘটনা আইনজীবীদের সুনাম ক্ষুণ্ণ করে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুল হালিম অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, সেতারাসহ চারজন আসামির হাজিরা ও একজন নারী আত্মসমর্পণের কথা ছিল। আমিও সেই মতে হাজিরা ও জামিন আবেদন করি; কিন্তু তারা একশ টাকায় একজন নারীকে ভাড়া করে শরিফা সাজিয়ে কাঠগড়ায় তোলেন। সেটি আদালতের কাছে ধরা পড়ে যায়। বিষয়টি আমি জানতাম না, তারা আমাকে জানায়নি।