কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এক তৃতীয় লিঙ্গকে কান ধরে ওঠবস ও মারধর করার অভিযোগে ফারুকুল ইসলাম নামে সেই যুবককে হেফাজতে নিয়েছে ডিবি পুলিশ।
শুক্রবার রাতে তাকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ওসি জাবেদ মাহমুদ। এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
কক্সবাজার সৈকতে একাধিক নারীকে নানাভাবে হেনস্তা করা সেই যুবকের দাবি— সমাজ পরিবর্তনের জন্য সৈকতে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত নারীদের শাসন করেছেন তিনি। এর পেছনে অন্য কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল না। তবে সেটি যে ভুল ছিল, তিনি এখন তা বুঝতে পারছেন বলে জানান অভিযুক্ত ফারুকুল ইসলাম। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে এ তথ্য জানান।
অভিযুক্ত ফারুকুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া লোহাগাড়া এলাকায় বলে জানিয়েছেন ডিবির ওসি। তবে কক্সবাজার ও কুতুবদিয়া উপজেলায় তাদের একাধিক বাড়ি রয়েছে।
ডিবি হেফাজতে নেওয়ার আগে ফারুকুল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন— যেসব কাজ আইন পারে না, সেসব কাজ জনগণই পারে। সুতরাং আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না।
এদিকে ফারুকুলের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন দাবি করেছেন, তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তবে আওয়ামী লীগ সরকার যতদিন ক্ষমতায় ছিল, ততদিন পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের সঙ্গে তিনি ওঠবস করতেন। এমনকি ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীকেও নিয়মিত আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতেন। তবে সরকার পতনের পরপরই রহস্যজনকভাবে তার ফেসবুক থেকে কয়েক বছরের ছবি ও শত শত পোস্ট ডিলিট করে দেন ফারুকুল ইসলাম। সরকার পতনের আগ মুহূর্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলেও বিএনপিপন্থিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগ দিয়েছিলেন।
তারা আরও বলেন, ফারুকুল একটু পাগলাটে ধরনের মানুষ। তিনি কথায় কথায় মিথ্যা কথা বলেন। কেউ যদি তাকে কোনো বিষয়ে একটু উসকায়, তাহলে তিনি তা বাস্তবায়ন করতে পিছপা হন না, যত বিতর্কিতই হোক না কেন। নারীদেরও হেনস্তা করা তারই একটি অংশ বলে দাবি তার ঘনিষ্ঠজনদের।
এদিকে ভুক্তভোগীরা কোনো অভিযোগ বা মামলা না করায় তার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।
জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি একদল যুবক কক্সবাজার সৈকতে এক ‘নারীকে’ কান ধরে ওঠবস করানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে চারদিকে সমালোচনা শুরু হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফারুকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদের পর সিনিয়র কর্মকর্তাদের নির্দেশে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে তখন তাকে আটক বা গ্রেফতার দেখানোর বিষয়টি আসবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ‘নারীকে’ কান ধরে ওঠবস করাচ্ছে একদল যুবক। ভুক্তভোগী কানে হাত দিয়ে ওঠবস করতে অপারগতা প্রকাশ করলে উপস্থিত অনেক যুবক লাঠি দিয়ে তাকে একাধিকবার আঘাত করেন। সেই লাঠির আঘাত থেকে রক্ষা পেতে ভুক্তভোগী কান ধরে ওঠবস করতে থাকেন। শুধু তাই নয়, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জনতা তাকে কান ধরে ওঠবসের গণনাও করছিলেন, আর মারধরের দৃশ্য ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। ‘নারীর’ কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় মোবাইল ফোনও।
এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে চারদিকে। অনেকেই বলছেন, ‘কক্সবাজার কেউ হজ করতে আসে না। এটি পর্যটন এলাকা। এভাবে পর্যটক হেনস্তার শিকার হলে প্রভাব পড়বে পর্যটন শিল্পের ওপর।’
তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ বলছে, কান ধরে যাকে ওঠবস করানো হয়েছে, সে মেয়ে নয়, তৃতীয় লিঙ্গের।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম বলেন, ‘এটি মেয়ে নয়, তৃতীয় লিঙ্গের। কিছু যুবক পুলিশের অগোচরে সৈকতে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে। আরেক মেয়ের কাছ থেকে একটি মোবাইলও ছিনিয়ে নিয়েছে। পরে মোবাইলটা উদ্ধার করে মেয়েকে ফেরত দিয়েছে পুলিশ। তবে এভাবে আইন হাতে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। তারা পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারত। পুলিশকে না জানিয়ে এমন ঘটনা আইনগত অপরাধ। বিষয়টি জেলা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে কাউকে আটকের বিষয়টি আমাদের জানা নেই।’