বিক্রি হবে ১০ প্রজাতির প্রাণী
১৮৭ একরের এ চিড়িয়াখানার ১৩৭টি খাঁচায় বর্তমানে ১৩৫ প্রজাতির ৩ হাজার ৩৪২টি প্রাণী আছে। এর মধ্যে খাঁচায় রাখার ‘অবস্থা নেই’, এমন অন্তত ১০ প্রজাতির প্রাণী কমিয়ে ফেলতে চাইছেন তারা।
চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “বর্তমানে চিড়িয়াখানায় যে প্রাণীগুলো বাড়তি আছে, তাদের কিছু বিক্রি করা যাবে। আর বাকিগুলো হস্তান্তর করা হবে বনবিভাগের কাছে।”
বর্তমানে ২৬০০-র মতো প্রাণী রাখার সক্ষমতা জাতীয় চিড়িয়াখানার রয়েছে বলে জানান । সেখানে এখন ছয়টি গাধা রাখার ধারণক্ষমতা থাকলেও আছে ১৩টি। এর মধ্যে ৯টিকে রাখা হয়েছে গাধার খাঁচাতেই। বাকিগুলোর মধ্যে তিনটিকে রাখা হয়েছে ওয়াটার বাকের সঙ্গে; আরেকটিকে অন্য খাঁচায় তিনটি ঘোড়ার সঙ্গে রাখতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রফিকুল ইসলাম বলেন, “গাধার জন্য নির্ধারিত খাঁচায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় এ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।”
বর্তমানে চিড়িয়াখানায় অজগর সাপ রয়েছে ৩১টি, তবে রাখার জায়গা আছে ২০টির। অ্যারাবিয়ান ঘোড়া রয়েছে ৮টি, তবে রাখা যাবে ৪টি। দেশি ঘোড়া রয়েছে ৪টি, ধারণক্ষমতা আছে ২টির। জলহস্তী রয়েছে ১৩টি, রাখা যাবে ৭টি। দেশি কবুতরের ধারণক্ষমতা ৮০, অতিরিক্ত ৪৫টি দেশি কবুতর কমাতে চায় কর্তৃপক্ষ। আর চিড়িয়াখানায় জালালি কবুতর রাখা যাবে ১০০টি, আছে আরো ৪৫টি। কানি বক রাখা যাবে ২০০টি, বেশি আছে ১৭০টি। ৩০০টি ওয়াক পাখি রাখার সক্ষমতা রয়েছে, তবে মোট ওয়াক পাখি রয়েছে ৫০০টি। চিড়িয়াখানাটিতে ইমু পাখি রাখা যাবে ১৮টি, বেশি আছে আরো ১০টি।
চিড়িয়াখানার প্রাণীর সংখ্যা কমাতে চাওয়ার কারণ হিসেবে পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ধারণক্ষমতার বাইরে প্রাণী রাখলে ব্যবস্থাপনাসহ নানা ধরনের ত্রুটির ঝুঁকি রয়েছে; তাই একটা নির্দিষ্ট সংখ্যায় প্রাণী রাখতে চান তারা। “আমাদের যে খাঁচা, তার ধারণ ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রাণী সংখ্যা রাখতে হবে; নাহলে রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। আর খুব একটা বেশি প্রাণী রাখারও তো দরকার নেই, কারণ এর সঙ্গে সরকারের ব্যয়ের বিষয়ও জড়িত থাকে।”
রফিকুল ইসলাম বলেন, “এই প্রাণীগুলোকে যদি বিক্রি করা যায়, তাহলে সরকারের একটা অর্থও আসবে। অন্যদিকে ম্যানেজমেন্টের ঝামেলাও কমবে। আর দর্শনার্থীদের জন্য তো কিছু প্রাণী আছেই।”
চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, “মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে আমরা অতিরিক্ত প্রাণীগুলোর ব্যবস্থা নেব। অজগর সাপ হয়তো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা যেতে পারে। কারণ এর গ্রাহক হবে বলে আমার মনে হয় না, সেজন্য এটাকে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তরের একটা প্রস্তাব দিয়েছি।
“গাধা, ঘোড়া, ইমু পাখি বিক্রি করা যেতে পারে। জলহস্তী বিনিময়ের মাধ্যমে বিভিন্ন পার্কে দেওয়া যেতে পারে। কানি বক, ওয়াক পাখি এগুলোকে প্রকৃতিতে উন্মুক্ত করা যেতে পারে— তাহলে তারা তাদের মতো করে বেঁচে থাকবে। তবে সবই মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে হবে।”
কবে নাগাদ এ প্রক্রিয়া শুরু হবে, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়িত হতে অন্তত আরো তিন মাস সময় লাগবে।
“এটা একটা লম্বা প্রসেস, মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেবে, এরপর এটার মূল্য নির্ধারণের প্রশ্ন আসবে। মূল্য নির্ধারণ করে, এটার আবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। এরপর বিক্রি শুরু হবে।”
মহামারীর অবসরে সেখানকার প্রাণীদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিত্রা হরিণের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ফলে বাড়তি হরিণগুলো কমাতে ২০২১ সালের মার্চ থেকে হরিণ বিক্রি শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
পরে ময়ূরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেটিও বেচতে শুরু করেন তারা। বর্তমানে প্রতিটি চিত্রা হরিণ ৫০ হাজার টাকা এবং ময়ূর ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে ময়ূর বিক্রি আপাতত কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমাদের অনেক বড় একটা ময়ূরের খাঁচা আছে। টোটাল ৪০০ ময়ূর রাখতে পারলে আগামী বছর এখান থেকে অন্তত আরো ৪০০ বাচ্চা পাব। তখন সেগুলোও বিক্রি করা যাবে।”